স্বদেশ ডেস্ক:
জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক প্রেসিডেন্ট মরহুম হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ-এর মৃত্যুতে শূন্য হওয়া রংপুর-৩ আসনের উপ-নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কম হলেও নিজ পুত্র রাহগির আলমাহি এরশাদ (সাদ এরশাদ) ৫৮ হাজার ৮৭৮ হাজার ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন।
তিনি জাতীয় পার্টি ও মহাজোটের প্রার্থী ছিলেন। এখানে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি হয়েছেন বিএনপির রিটা রহমান। তিনি পেয়েছেন ১৭ হাজার ৬৪৭ ভোট। এই নির্বাচনে মাত্র ২২ দশমিক ৮৬ ভাগ ভোট পড়েছে। এদিকে বিএনপি প্রার্থী ভোট টেম্পারিং করার অভিযোগ তুলেছেন। অন্যদিকে সাদ এরশাদ তার এ বিজয়কে পিতা মরহুম এরশাদ ও রংপুরবাসীকে উৎসর্গ করেছেন।
রংপুর-৩ শুন্য আসনে উপ-নির্বাচন নিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও রংপুর আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা জিএম সাহাতাব উদ্দিন জানান, মহাজোট মনোনীত প্রার্থী রাহগির আলমাহি এরশাদ ( সাদ এরশাদ) ৫৮ হাজার ৮৭৮ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি বিএনপির রিটা রহমান পেয়েছেন ১৬ হাজার ৯৪৭ ভোট। এছাড়ও স্বতন্ত্র প্রার্থী এরশাদের ভাতিজা হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ মোটরগাড়ি প্রতীক নিয়ে ১৪ হাজার ৯৮৪ ভোট, এনপিপি’র শফিউল আলম আম প্রতিক নিয়ে ৬১১ ভোট, গণফ্রন্ট’র কাজী মাঃ শহীদুল্লাহ মাছ প্রতিক নিয়ে ১ হাজার ৬৬২ ভোট এবং খেলাফত মজলিসের তৌহিদুর রহমান মণ্ডল দেয়াল ঘড়ি প্রতিক নিয়ে পেয়েছেন ৯২৪ ভোট। এই নির্বাচনে ২২ দশমিত ৮৬ ভাগ ভোট পড়েছে। বাতিল হয়েছে ১৫টি ভোট।
তিনি আরো জানান, ১৭৫টি কেন্দ্রের ৯৪০ টি স্থায়ী এবং ৮৩ টি অস্থায়ী মোট ১ হাজার ২৩ টি কক্ষে বিরতিহীনভাবে সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ করা হয়। ভোট সুষ্ঠু এবং সুন্দর ও অবাধ নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি দেবদাস ভট্রাচার্য বলেছেন, ৭৩টি ঝুকিপুর্ণসহ মোট ১৭৫টি ভোটকেন্দ্রে সুষ্ঠুভাবে ভোট সম্পন্ন হয়েছে। ভোটের আগের দিন ও ভোটের পরের দিন নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা বেস্টনি থাকবে। কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
ভোটার উপস্থিতি কম
সরেজমিনে দেখা গেছে, বেলা ১১ টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত পুলিশ লাইন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট পড়েছে ৮৩ টি। এই কেন্দ্রে ভোটার রয়েছেন ২ হাজার ৫৯ জন। এই কেন্দ্রের প্রিজাইটিং অফিসার পুলিন লাইন স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক একেএম রবিউল ইসলাম এই তথ্য জানিয়ে বলেন, আশা করছি দুপরের পর ভোটাররা বেশি আসবেন। এদিকে বেলা ১২ টায় লায়ন্স স্কুল এন্ড কলেজের প্রিজাইটিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশরাফ জানান, এই ভোট কেন্দ্রে ২ হাজার ৮১৩ টি ভোট রয়েছে। এর মধ্যে বেলা ১২ টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে মাত্র ৭৮টি।
কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজের প্রিজাইিটিং ফেরদৌস আলম জানান, মোট ১ হাজার ৭৩৮ ভোটের মধ্যে বেলা ১১ টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে ৬১ টি। কেরামতিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের কেন্দ্রের প্রিজাইটিং অফিসার আজহারুল ইসলাম জানান, তার কেন্দ্রে ভোট সংখ্যা ৩ হাজার ৬৪৯ টি। এরমধ্যে বেলা সোয়া বারো টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে মাত্র ২৫০ টি। নিসবেতগঞ্জ সরকারী প্রাথমিক আনোয়ার আল সাদাত মোল্লা জানান, তার কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা ৩ হাজার ১৭। এরমধ্যে বেলা ১২ টা ১০ মিনিট পর্যন্ত ভোট পড়েছে ২১৭ টি ।
অন্যদিকে সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিজাইটিং অফিসা ফরহাদুজ্জামানজানান, মেটা ২ হাজার ৭০৯ ভোটের মধ্যে বেলা ১ টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে ২১৭ টি। সদর উপজেলার মমিনপুর ইউনিয়নের সাহাবাজপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রিজাইটিং কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন জানান, তার কেন্দ্রে মোট ভোটার ৩ হাজার ৮০৫ জন। এরমধ্যে বেলা ২ টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে ৪০৮ টি। মমিনপুর পালপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়র প্রিজাইটিং অফিসার জানান, তার কেন্দ্রে ২ হাজার ২ ভোটের মধ্যে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে ৬৬০ টি।
সরেজমিনে দেখা গেছে রংপুর-৩ আসনটি সদর উপজেলার ৫ টি ইউনিয়ন এবং রংপুর সিটি করপোরেশনের ৯ থেকে ৩৩ টি মোট ২৫ টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত। এরমধ্যে নগরীর ২৫টি ওয়ার্ডে ভোট কেন্দ্রগুলোতে ভোটারের উপস্থিতি কম। তবে ইউনিয়নগুলোতে কিছুটা ভোট বেশি পড়ায় ভোটের সংখ্যা বেড়েছে।
বিএনপি প্রার্থীর অভিযোগ
ফলাফল ঘোষণা করার পর বিএনপি প্রার্থী রিটা রহমান রংপুরে নিজ বাসায় সংবাদ সম্মেলন করে প্রকাশিত ফল প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি অভিযোগ করে বলেছেন, প্রশাসন এবং কালোটাকার প্রভাবে ভোটের রাতে আমাদের নেতার্কীদের বাড়ি বাড়ি পুলিশ তল্লাশি চালিয়েছে। আমরা বলেছিলাম ভোটাররা ভোট দিতে আসবেন না, সেটাই প্রমানিত হযেছে।সরকার ও প্রশাসন প্রকাশ্যে প্রভাবিত হয়ে মহাজোট প্রার্থীকে বিজয়ী করার জন্য কাজ করেছেন। শুধু তাই নয় ১৫ ভাগ ভোট টেম্পারিং করারও অভিযোগ তুলেছেন তিনি।
বিএনপি প্রার্থী রিটা রহমান অভিযোগ করে বলেন, ভোটার উপস্থিতি স্মরণকালের মধ্যে কম হওয়ায় নির্বাচন কমিশনের যোগসাজসে সরকার ও মহাজোট প্রার্থৗ ১৫ ভাগ ভোট টেম্পারিং করার চেষ্টা করছে। বিষয়টি জানিয়ে আমি রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে দুপুরেই অভিযোগ দায়ের করেছি। কিন্তু তারা কোন ব্যবস্থা নেয়নি।
রিটা রহমান বলেন, শুক্রবার রাতে সদর আসনের বিভিন্ন জায়গায় বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে প্রশাসন। ভোটের বিভিন্ন সরঞ্জামাদি নিয়ে গেছে। ভোর বেলা আবার আমরা সেগুলো পাঠিয়েছি। এ বিষয়ে রাতে মোবাইলে ও সকালে রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দেয়া হলেও তারা কোন ব্যবস্থা নেননি।
রিটা রহমান বলেন, আমরা বারবার অনুরোধ করেছিলাম যে ভোটের মাঠ সুষ্ঠ রাখেন, নিরপেক্ষ আচরণ করেন। কিন্তু তারা পক্ষপাতিত্ব করছেন। ভোটের মাঠ সবার জন্য সমান করতে নির্বাচন কমিশন বার্থ।
রিটা রহমান বলেন, আমরা বার বার অভিযোগ করে আসছিলাম, ভোটাররা তাদের ভোটি নিয়ে শংকিত। ইভিএম মেশিনে কোথায় ভোট দিবেন, কোথায় যাবে এ নিয়ে তারা শংকিত। বিষয়টি আমরা কমিশনকে বার বার বলেছি। ভোটারদের আস্থায় আনার জন্য। কিন্তু তারা শোনেননি। আমাদের কথারই প্রতিফলন ঘটেছে ভোটে। নির্বাচন কমিশনের ওপর মানুুষের আস্থা নেই। তাই ভোটাররা আসেননি। সে কারণে সরকার ও প্রশাসন হস্তক্ষেপ করে মহাজোট প্রার্থীকে বিজয়ী করেছে।
এদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে রিটার্নিং কর্মকর্তা জিএম সাহাতাব উদ্দিন বলেছেন, বিএনপি প্রার্থীসহ যারাই যে কোন বিষযে অভিযোগ করেছেন। সাথে সাথেই আমরা সেসব বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি । আমাদের বিরুদ্ধে ভোট টেম্পারিং ও প্রভাব বিস্তারের যে অভিযোগ করা হয়েছে। তা মিথ্যা ও বানোয়াট।
সাদ এরশাদের বক্তব্য
বিজয়ী সাবেক রাষ্ট্রপতি মরহুম হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পুত্র রাহগির আলমাহি এরশাদ (সাদ এরশাদ) বলেছেন, ভোটার উপস্থিতি কম হলেও লাঙ্গলের বিজয় হওয়ায় ভোটের শুরু থেকেই বিএনপির প্রার্থী নির্বাচন কমিশন এবং প্রশাসনের বিরুদ্ধে মনগড়া অভিযোগ তুলেছেন। সাদ এরশাদ বলেন, সকালের দিকে কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি কম থাকলেও দুপুরের পর থেকে উপস্থিতি বেড়েছে। মাঠে যখন লাঙ্গলের ভোটারদের সরব উপস্থিতি, তখন বিএনপি প্রার্থী মিডিয়া এবং অভিযোগ নির্ভর হয়ে গেছে। তারা প্রশাসনের বিরুদ্ধে ভোট টেম্পারিং, কারচুপি এবং তাদের নেতাকর্মীদের হয়রানির যে অভিযোগ তুলেছেন, তা সত্য নয়। তিনি তার বিজয়কে মরহুম পিতা এবং রংপুরবাসীকে উৎসর্গ করার কথা জানান।
লাঙ্গল প্রতিকের প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয়ক জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম ও রংপুর জেলা সাধারণ সম্পাদক এসএম ফখর-উজ-জামান জাহাঙ্গীর জানান, এই আসনে বিজয়ের মাধ্যমে প্রমাণিত হলো জীবিত এরশাদের চেয়ে মৃত এরশাদ আরো শক্তিশালী। আমরা বিজয়ের জন্য মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়ার পাশাপাশি সকল ভোটারদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
প্রসঙ্গত : গত ১৪ জুলাই রংপুর সদর ৩ আসনের এমপি জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বিরোধী দলীয় নেতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর ১৬ জুলাই আসনটি শুন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।